ছবি ঘর | নির্মাণ তথ্য | খাবার | কৃষি | স্বাস্থ্য | প্রযুক্তি | দেশ | ইসলাম | লগইন

বাংলা নববর্ষ রচনা ও ইতিহাস

বাংলা নববর্ষ বাঙালির জাতীয় জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। গতানুগতিক জীবনধারার মধ্যে নববর্ষ নিয়ে আসে নতুন সুর, নতুন উদ্দীপনা। পুরোনো দিনের গ্লানি জরাকে মুছে দিয়ে একরাশ হাসি, আনন্দ আর গান দিয়ে ভুলিয়ে দিয়ে যায় নববর্ষ। প্রাচীনকাল থেকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এটি বাঙালির আনন্দময় উৎসব হিসেবে সুপরিচিত। বাংলা নববর্ষ তাই বাঙালির জাতীয় উৎসব।

বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনের ইতিহাসঃ-

বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন প্রচলনের ইতিহাস রহস্যে ঘেরা। কোনো কোনো ইতিহাসবিদ মনে করেন, বাংলার সুলতান হোসেন শাহ বাংলা সনের প্রবর্তক। কারো কারো মতে, দিল্লির সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রচলন করেন। তাঁর নির্দেশে আমির ফতেউল্লাহ সিরাজি পূর্বে প্রচলিত হিজরি ও চান্দ্র বছরের সমন্বয়ে সৌরবছরের প্রচলন করেন। তবে সুলতান হোসেন শাহের সময়ে (৯০৩ হিজরি) বাংলা সনের প্রচলন হলেও সম্রাট আকবরের সময় (৯৬৩ হিজরি) থেকেই এটি সর্বভারতীয় রূপ লাভ করে। তখন থেকেই এটি বাঙালি সংস্কৃতির সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। বাংলা সন আপামর বাঙালি জাতির একান্ত নিজস্ব অব্দ।

নববর্ষের উৎসবঃ-

বাঙালিরা প্রাচীনকাল থেকেই নববর্ষ উদ্যাপন করে আসছে। তখন বাংলার গ্রামীণ কৃষক সমাজই ছিল এই উৎসবের মূল। যে সময় বছর শুরু হতো অগ্রহায়ণ মাস থেকে। এটি ছিল ফসল কাটার সময়। সরকারি রাজস্ব ও ঋণ আদায়ের এটিই ছিল যথার্থ সময়। পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনের প্রচলন হলে বৈশাখ মাস থেকে বর্ষ গণনা শুরু হয়। আর বাঙালিরা পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করে। বাংলাদেশে নববর্ষ উদ্যাপনে এসেছে নতুন মাত্রা। বর্তমানে আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে নববর্ষ পালন করা হয়।

পহেলা বৈশাখঃ-

বিগত দিনের সমস্ত গ্লানি মুছে দিয়ে পাওয়া না পাওয়ার সব হিসাব চুকিয়ে প্রতিবছর আসে পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ। মহাধুমধামে শুরু হয় বর্ষবরণ। সবাই গেয়ে ওঠে রবীন্দ্রনাথের এই গান:
এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ,
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক।
বাংলা নববর্ষের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে পহেলা বৈশাখে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলা। এটি একটি সর্বজনীন উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের মহামিলনক্ষেত্র এই মেলা। এ মেলায় আবহমান গ্রামবাংলার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একটি পরিচিতি ফুটে ওঠে। বাউল, মারফতি, মুর্শিদি, ভাটিয়ালিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগানে মেলার আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়। যাত্রা, নাটক, পুতুল নাচ, সার্কাস, নাগরদোলা ইত্যাদি মেলায় বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে। মেলায় পাওয়া যায় মাটির হাঁড়ি, বাসনকোসন, পুতুল; বেত ও বাঁশের তৈরি গৃহস্থালির সামগ্রী, তালপাখা, কুটিরশিল্পজাত বিভিন্ন সামগ্রী, শিশু-কিশোরদের খেলনা, নারীদের সাজ-সজ্জা ইত্যাদি। এছাড়া চিড়া, মুড়ি, খৈ, বাতাসাসহ নানা রকমের মিষ্টির বৈচিত্র্যময় সমারোহ থাকে বৈশাখি মেলায়। বৈশাখি মেলা ছাড়াও বাংলা নববর্ষের আরেকটি আকর্ষণ হালখাতা। এদিন গ্রামে-গঞ্জে-শহরে ব্যবসায়ীরা তাদের পুরোনো হিসাব-নিকাশ শেষ করে নতুন খাতা খোলেন। এ উপলক্ষে তাঁরা নতুন-পুরোনো খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি খাওয়ান। প্রাচীনকাল থেকে এখনো এ অনুষ্ঠানটি বেশ জাঁকজমকভাবে পালিত হয়ে আসছে।

নববর্ষের প্রভাবঃ-

বাংলা নববর্ষ বাঙালির জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। এদিন দেশের সর্বত্র সরকারি ছুটি থাকে। পারিবারিকভাবে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়। সব কিছুতে আনন্দের ছোঁয়া লাগে। আধুনিক রীতি অনুযায়ী ছোট-বড় সবাই নববর্ষের শুভেচ্ছা কার্ড বিনিময় করে। অতীতের লাভ-ক্ষতি ভুলে গিয়ে এদিন সবাই ভবিষ্যতের সম্ভাবনার স্বপ্ন বোনে। নববর্ষ আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে চলার প্রেরণা জোগায়।

নববর্ষের তাৎপর্যঃ-

বাঙালির নববর্ষের উৎসব নির্মল আনন্দের উৎসধারা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এটি আজ আমাদের জাতীয় উৎসব। নববর্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আমরা আমাদের জীবনবাদী ও কল্যাণধর্মী রূপটিই খুঁজে পাই। আমাদের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক চেতনাকে প্রত্যক্ষ করি। আমাদের নববর্ষ উদ্যাপনে আনন্দের বিস্তার আছে, কিন্তু কখনো তা পরিমিতবোধকে ছাড়িয়ে যায় না। বাংলা নববর্ষ তাই বাঙালির সারা বছরের আনন্দের পসরা-বাহক।

উপসংহারঃ-

বাংলা নববর্ষ বাঙালিকে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখায়। পুরোনোকে ভুলে গিয়ে নতুনকে গ্রহণের প্রেরণা দান করে। আমাদের জীবনে নবচেতনার সঞ্চার করে, পরিবর্তনের একটা বার্তা নিয়ে আসে নববর্ষ। আমাদের মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করে; জাতীয় জীবনে স্বকীয় চেতনা বিকাশে উদ্বুদ্ধ করে। প্রাচীনকাল থেকে বাঙালি জাতি বাংলা নববর্ষের এই চেতনাকে বুকে লালন করে চলেছে অবিরামভাবে। তাই বাংলা নববর্ষ আমাদের জীবনে এত আনন্দ ও গৌরবের।

উৎস ও ব্যবহারঃ-

পড়াশোনা বিষয়ক এই লিখাটি ইন্টারনেট ও বিভিন্ন বই থেকে তথ্য সংগ্রহ করে লিখা হয়েছে। এই লিখাটি সবার জন্যে উন্মুক্ত। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ছাড়া যে কেউ এই লিখাটি ব্যবহার করতে পারবেন।

একই ধরনের বিষয়ঃ-

বিষয়: আমাদের জাতীয় পতাকা রচনা ও ইতিহাস

সর্বশেষ প্রকাশিত বিষয়

বিষয়: বিদ্রোহী কবিতার সারমর্ম

বিষয়: কাজলা দিদি কবিতার সারমর্ম

বিষয়: ছাত্রদলের গান কবিতার সারমর্ম

বিষয়: সংকল্প কবিতার সারমর্ম

বিষয়: কবর কবিতার সারমর্ম

বিষয়: ভাবসম্প্রসারণ একতাই বল

বিষয়: ভাবসম্প্রসারণ সকলের তরে সকলে আমরা

বিষয়: আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে, আসে নাই কেহ অবনি পরে

বিষয়: বাংলা নববর্ষ রচনা ও ইতিহাস

বিষয়: বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা সারমর্ম

বিষয়: বঙ্গভাষা কবিতার সারমর্ম

বিষয়: সারাংশ ও সারমর্ম কাকে বলে? সারাংশ সারমর্ম লেখার নিয়ম

বিষয়: ভাবসম্প্রসারণ বিদ্যা অমূল্য ধন

বিষয়: যে সহে সে রহে ভাবসম্প্রসারণ